নিউজ ডেস্ক::
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে সারা দেশে জঙ্গি প্রতিরোধ মনিটরিং কমিটি গঠিত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে এ কমিটি কাজ করবে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। দু’একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করা হবে।
সভাকক্ষ বাদ দিয়ে দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার দফতরের ভেতরে মন্ত্রণালয়ের সব উইং প্রধানদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে বৈঠকের আলোচনার বিষয় ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বৈঠকে যোগ দেয়া একাধিক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করে রোববার যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গি প্রতিরোধে উপজেলায় মনিটরিং কমিটি গঠন, ডিসিদের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ করাসহ মাঠপর্যায়ে কাজের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তার নির্দেশনা ও বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে কাল-পরশু একাধিক চিঠি জারি হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী মনিটরিং কমিটি গঠনের আদেশ রোববারই জারি করতে বলেছিলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেয়ায় শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এ কারণে বৈঠকের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নিয়ে বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অফিস আদেশ জারি হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলায় মনিটরিং কমিটির প্রধান হবেন ইউএনও। কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন উপজেলা চেয়ারম্যান। সদস্য সচিব করা হবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। এতে উপজেলার প্রভাবশালী ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সদস্য হিসেবে রাখা হবে। কমিটিতে এখন পর্যন্ত সাতটি কাজ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তা হচ্ছে- শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আড়ালে কেউ উগ্র রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ চর্চা বা প্রচারের চেষ্টাসহ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা, তা তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদিত বইয়ের বাইরে ধর্মীয়, ভাষা ও জ্ঞানচর্চার আওতায় অতিরিক্ত বই পড়ানো হয় কিনা- তা তদারকি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য (যেমন- শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করা) প্রতিপালনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সচেষ্ট কিনা বা এ চেতনাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, তা তদারকি করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা দেয়া হয় কিনা, তা তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় অনাকাঙ্ক্ষিত খাতে খরচ হচ্ছে কিনা, সেটিও তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া। পারিবারিক শিক্ষার বাইরে যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ছোট/মাঝারি/বড় পরিসর) পরিচালনা কমিটি ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে কিনা এবং অনুমোদিত পাঠ্যক্রমের বাইরে মনগড়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বই পড়ানো হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে অবগত থাকা। শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নয়নে সুপারিশ করা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের সঙ্গে জঙ্গিবিরোধী সভাগুলোতে দেয়া নির্দেশনার আলোকে করণীয় নির্ধারণ ও ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং বাড়ানো, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম ও তদারকি জোরদার করা। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক হাজিরা নিশ্চিত করবে। সিনিয়র এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে যাতে জঙ্গিবাদ গ্রাস করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা পাঠাতে বলেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম ও তদারকি করতে গেলে সবচেয়ে বড় লাভ হবে শিক্ষার। কেননা এতে করে ঝরে পড়া কমবে। প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও লেখাপড়া নিয়মিত নজরদারিতে থাকবে। এসবের যোগফল হবে শিক্ষার সার্বিক মানের উন্নয়ন।
বৈঠকে মন্ত্রী অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান আর চলতে না দেয়া ও শিক্ষা আইন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও স্বীকৃতি বন্ধ রাখতে বলেন। বর্তমানের রেওয়াজ হচ্ছে, ব্যক্তি পর্যায়ে নিু মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। এরপর একাধিক পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে যোগ্যতার পরিচয় দেয়। তারপর শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন লাভ করে। রোববারের বৈঠক থেকে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দেন, এখন থেকে এভাবে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। স্থাপনের আগে অবশ্যই সরকারের থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কেননা এই রেওয়াজের আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গি মদদদাতারা প্রতিষ্ঠান খুলে বসছে। যেটি পিস স্কুলের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
শিক্ষামন্ত্রী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭ লাখ আসন খালি থাকার কারণ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এভাবে কী করে অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেল তা বের করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় সরকারি স্কুল ও কলেজে আর কোনো সংযুক্তি না দিতে এবং বর্তমানে সংযুক্ত থাকা শিক্ষকদের মফস্বলের শিক্ষক সংকটে ভোগা স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
পাঠকের মতামত